Saturday, August 19, 2023

ঐক্যর আহ্বান।

আশায় ভরা হৃদয় নিয়ে, ঐক্যর আহ্বানে

প্রিয় মুসলিম ভাই,
আমরা এই দেশে শুধুমাত্র ব্যক্তি হিসাবে নয়, আমাদের বিশ্বাস, আমাদের ইতিহাস এবং আমাদের আকাঙ্ক্ষা দ্বারা আবদ্ধ একটি ঐক্যবদ্ধ সম্প্রদায় হিসাবে অবস্থান করছি।
 এই বৈচিত্র্যময় এবং প্রাণবন্ত দেশে, আমরা ইসলামের সুতোয় বোনা একটি সমৃদ্ধ জাতির অংশ হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছি। আমাদের বিশ্বাস কেবল একটি আধ্যাত্মিকতার ব্যাপার নয়, বরং এটি একটি পথপ্রদর্শক আলো। যা আমাদের অগ্রগতি, ঐক্য এবং সম্প্রীতির পথকে আলোকিত করে।
 যখন আমরা পরিবর্তন এবং বিবর্তনের স্রোতকে অতিক্রম করছি, তখন আমাদের নিজেদের মধ্যে একটি শক্তিশালী এবং অটুট বন্ধন তৈরি করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। আমাদের শক্তি কেবল সংখ্যায় নয়, বরং আমাদের যৌথ চেতনায়, আমাদের ভাগ করা মূল্যবোধে এবং ন্যায়বিচার, সহানুভূতি এবং সহনশীলতার নীতির প্রতি আমাদের অটল অঙ্গীকারে।
 আসুন আমরা মনে রাখি যে, ইসলামের শিক্ষা আমাদেরকে সহানুভূতিশীল, মহানুভব এবং ন্যায়বিচারের রক্ষক হওয়ার আহ্বান জানায়। এই নীতিগুলি কেবল আমাদের ব্যক্তিগত জীবনকে পরিবর্তন করবে না বরং একটি সম্প্রদায় হিসাবে আমাদের মিথস্ক্রিয়াকেও প্রভাবিত করবে। এই মূল্যবোধগুলোকে আত্মস্থ করে আমরা সত্যিকার অর্থে আমাদের এই দেশকে শান্তি ও সমৃদ্ধির অভয়ারণ্যে রূপান্তরিত করতে পারি।
 এটি অর্জনের জন্য, আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের পার্থক্যগুলিকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে, এবং আমাদেরকে একত্রিত করে এমন সাধারণ ভিত্তিতে ফোকাস করতে হবে। আমরা হয়তো বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য ভুগতে পারি, কিন্তু ইসলামের সুতোর বাঁধন আমাদের সবার হৃদয়ে গেঁথে আছে। আসুন আমরা বোঝাপড়া, সহযোগিতা এবং ভ্রাতৃত্বের বুননের জন্য এই সুতোর বাঁধনটিকে কাজে লাগাই।
 আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ শুধু একটি ভৌগোলিক সত্তা নয়; এটি আমাদের অস্তিত্ব, আমাদের ভাগ করা ইতিহাস এবং আমাদের সম্মিলিত স্বপ্নের একটি প্রমাণ। একসাথে, আমরা একটি জাতি গড়ে তুলতে পারি যেটি ঐক্য, অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধির আলোকবর্তিকা হিসাবে প্রজ্জ্বলিত হবে।
 আসুন আমরা এমন একটি পরিবেশ গড়ে তুলি যেখানে মতের পার্থক্যগুলোকে সহনশীলতার সাথে মোকাবেলা করা হয়, এবং যেখানে ইসলামের নীতিগুলি একটি ন্যায়পরায়ণ সমাজ গঠনে আমাদের পথ দেখায়।

ঐক্যের চেতনায়, আসুন আমরা বাধা অতিক্রম করতে এবং চ্যালেঞ্জের ঊর্ধ্বে উঠতে হতে হাত মেলাই।  

একসাথে, আমরা এমন একটি উত্তরাধিকার তৈরি করতে পারি যা পরবর্তী প্রজন্ম গর্ব এবং কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে। দৃঢ় সংকল্প, বিশ্বাস এবং আমাদের ভাগ করা মূল্যবোধের প্রতি অঙ্গীকার নিয়ে আমরা বাংলাদেশের মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারি এবং সবার জন্য একটি উজ্জ্বল, আরও সম্প্রীতিপূর্ণ ভবিষ্যত তৈরি করতে পারি।

আল্লাহ আমাদের প্রচেষ্টায় বরকত দান করুন এবং আমাদেরকে ন্যায় ও ঐক্যের পথে পরিচালিত করুন।


Friday, May 5, 2023

"The Importance of Truthfulness in Islam: Building a Foundation of Honesty and Integrity"

Truthfulness is one of the most important virtues in Islam, as it forms the foundation of a person's relationship with Allah and with others. In Islam, truthfulness is considered a fundamental aspect of the character of a Muslim, and is seen as essential for leading a righteous and fulfilling life. The concept of truthfulness in Islam is derived from the Quran and the teachings of the Prophet Muhammad (peace be upon him). The Quran stresses the importance of truthfulness in many verses, including the following: "O you who believe! Fear Allah, and be with those who are truthful." [Quran 9:119] "And cover not truth with falsehood, nor conceal the truth when you know (what it is)." [Quran 2:42] "O you who believe! Stand out firmly for Allah and be just witnesses and let not the enmity and hatred of others make you avoid justice. Be just: that is nearer to piety, and fear Allah. Verily, Allah is Well-Acquainted with what you do." [Quran 5:8] These verses emphasize the importance of truthfulness in all aspects of life, and highlight the fact that truthfulness is a prerequisite for a person's relationship with Allah. The Prophet Muhammad (peace be upon him) also stressed the importance of truthfulness in his teachings and actions. He is known as Al-Amin (the trustworthy) among his people even before his prophethood. In a well-known hadith (narration), he said: "Truthfulness leads to righteousness, and righteousness leads to Paradise. And a man keeps on telling the truth until he becomes a truthful person. Falsehood leads to wickedness, and wickedness leads to the Hellfire. And a man keeps on telling lies until he is written as a liar with Allah." [Sahih al-Bukhari] This hadith highlights the importance of truthfulness in leading a righteous life and attaining Paradise in the Hereafter. It also highlights the grave consequences of falsehood and lying, which can ultimately lead to punishment in the Hellfire. Truthfulness in Islam goes beyond simply telling the truth. It also encompasses being honest in one's actions, intentions, and dealings with others. Muslims are encouraged to be truthful in their business dealings, in their relationships with their family and friends, and in their interactions with the broader society. This includes being truthful in speech, in promises made, in fulfilling commitments, and in avoiding deceitful behavior. In Islam, there is a strong emphasis on speaking the truth even if it may be against one's own interests. This is because Allah values honesty and integrity above all else, and rewards those who are truthful in their speech and actions. Muslims are taught to always speak the truth, even if it may cause them harm, and to avoid lying or misleading others in any way. In conclusion, truthfulness is a fundamental aspect of Islam, and is considered a prerequisite for leading a righteous and fulfilling life. Muslims are encouraged to be truthful in their dealings with Allah and with others, and to avoid lying or deceitful behavior in any form. By upholding the values of truthfulness and honesty, Muslims can lead a life of purpose and meaning, and ultimately attain success in this world and in the Hereafter.

Saturday, June 1, 2019

ঈদুল ফিতর : করণীয় ও বর্জনীয় আমল

 রবিবার ০২ জুন ২০১৯ |

অধ্যাপক রুহুল কুদ্দুস : মহানবী (সা.) যখন মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করে এলেন। তখন মদীনাবাসীকে তিনি দু’টো দিবসে আনন্দ উল্লাস উৎসব করতে দেখেন। পারসিক প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে বসন্তের পূর্ণিমা রজনীতে ‘মেহেরজান’ আর হেমন্তের পূর্ণিমা রজনীতে ‘নাওরোজ’ নামক উৎসবে মদীনাবাসীকে এমন সব আমোদ প্রমোদে মেতে উঠতে দেখলেন, যা সুস্থ বিবেকের কাছে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ বিশেষ দিনে তোমাদের আনন্দ উল্লাসের কারণ কি? মদীনার নওমুসলিমগণ বললেন, ‘আমরা জাহেলী যুগ হতে এ দু’টি দিন এভাবে পালন করে আসছি।’ নবী করিম (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের আনন্দ উৎসবের জন্য এর চেয়েও দুটো উত্তম দিন নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তার একটি হল ‘ঈদুল ফিতর’ অন্যটি ঈদুল আযহা’। তোমরা পবিত্রতার সাথে এ দু’টি উৎসব পালন করবে।’ –(আবু দাউদ ও নাসায়ী)।
মহানবী (সা.) আরও বলেছেন, ‘লি-কুল্লিকাওমিন ঈদ-হাজা ঈদুন’ অর্থাৎ প্রত্যেক জাতিরই নিজস্ব খুশির উৎসব রয়েছে। আমাদের জন্য এ দুটো হলো সেই খুশির উৎসব। ইসলামের ইতিহাসে মহানবী (সা.)-এর জীবনে দ্বিতীয় হিজরীতে এক মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর ১ শাওয়াল ঈদুল ফিতর আর ১০ জিলহজ্জ ঈদুল আযহা বা কুরবানীর ঈদ প্রথম পালিত হয়।

‘ঈদ’ অর্থ আনন্দ, উৎসব পর্ব। আর ফিতর অর্থ ভাঙ্গা, চিড়, ভাঙ্গন। এদিক হতে ঈদুল ফিতর অর্থ হলো রোজা ভাঙার পর্ব বা উৎসব। দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর আল্লাহর নির্দেশে আমরা এদিনে রোজা ভঙ্গ করি বলে এ দিনটির নাম ঈদুল ফিতর।
ঈদের আর একটি অর্থ ফিরে আসা, বার বার আসা। আর ফিতর অর্থ ভঙ্গ করা। যেহেতু ঈদুল ফিতর প্রতি বছরই যথাসময়ে আমাদের মাঝে বার বার ফিরে আসে। এ দিনটিতে আমরা সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌন সম্ভোগে লিপ্ত না হওয়ার যে বিধান ছিল তা ভঙ্গ করি বলে এদিনটিকে ঈদুল ফিতর বলা হয়েছে।
ইসলাম কোন অনুষ্ঠান সর্বস্ব ধর্ম নয়। ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। ঈদ একটি ইবাদতের নাম। আল্লাহর হুকুমে নির্ধারিত সীমার মধ্যে আনন্দ, উৎসব ও নির্মল চিত্তবিনোদন করার বিধান রয়েছে। রাসূল (সা.) এদিন সম্পর্কে বলেছেন, এ দিনটিতে তোমরা রোজা রেখো না। এ দিনটি তোমাদের জন্য আনন্দ উৎসবের দিন। খাওয়া, পান করা আর পরিবার-পরিজনদের সাথে আনন্দ-উৎসব করার দিন। আল্লাহকে স্মরণ করার দিন। [মুসনাদ আহমদ]।
এ দিনটি আমাদের জন্য এক বিরাট নিয়ামত। কিন্তু আমরা অনেকেই এ দিনটিকে নিয়ামত হিসাবে গ্রহণ করি না। এ দিনে এমন অনেক কাজ রয়েছে যা আমাদের জন্য ইবাদত। রাসূল (সা.) স্বয়ং যে আমলগুলো করেছেন। আবার এমন বহু কাজ আছে যা বর্জন করা আমাদের জন্য আবশ্যক। নিচে ঈদের দিনে করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো আলোচনা করা হলো-
ঈদুল ফিতরে করণীয় আমল
 গোসল করা, সুন্দর পোশাক পরিধান করা ও সুগন্ধি ব্যবহার করা : ঈদের নামাজের পূর্বে গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করা সুন্নাত, আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) ঈদের নামাযে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন। (মুয়াতা ইমাম মালিক)।
ঈদের দিনে আরেকটি করণীয় হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সুন্দর পোশাক পরিধান করা। জাবির (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.)-এর একটি সুন্দর জুব্বা ছিল যা তিনি দুই ঈদে ও জুময়ার দিনে পরিধান করতেন। (মুসনাদ বায়হাকী)।
ঈদের দিন আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নাত। ইমাম মালিক (রহ.) বলেন, মুসলিম প-িতগণ প্রত্যেক ঈদে সুগন্ধি ব্যবহার করা ও সুসজ্জিত হওয়াকে মুস্তাহাব বলেছেন। (আল-মুগনী)।
(২) হালকা কিছু খাওয়া : ঈদুল ফিতরে নামাযে যাওয়ার পূর্বে কিছু খাওয়া সুন্নাত। হাদিসে খেজুর বা মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) খেজুর না খেয়ে ঈদগাহে যেতেন না। (সহি আল-বুখারী)।
(৩) সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা :
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহ সাদাকাতুল ফিতর প্রদান করাকে বাধ্যতামূলক করেছেন। যা একদিকে অশ্লীল, বেহুদা কথা ও কাজ দ্বারা কলুষিত রোজাকে পবিত্র করে। অন্যদিকে অসহায়-নিঃস্ব গরীবকে খাদ্যদানে সহায়তা করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। যে ব্যক্তি সাদাকাতুল ফিতর ঈদের নামাযের পূর্বে আদায় করবে। তা কবুল করা হবে। আর যে ব্যক্তি ঈদের নামাযের পরে আদায় করবে। তা সাধারণ সাদাকাহ হিসেবে গণ্য হবে। (আবু দাউদ; ইবনে মাজাহ)।
(৪) পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া : ঈদের নামায আদায়ের জন্য তাড়াতাড়ি ঈদগাহে যাওয়া উচিত। পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নাত।
(৫) এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া, অন্য রাস্তা দিয়ে আসা : ঈদের আরেকটি সুন্নাত হলো এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা। এতে দীর্ঘ হাঁটা এবং বেশি মানুষের সাথে মিশার উপকারিতা রয়েছে। ইবনু সুবাইর (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) এক রাস্তা দিয়ে ঈদের নামাযে যেতেন এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসতেন। (সহী আল বুখারী)। এটা এ জন্য যে, যাতে উভয় পথের লোকদেরকে সালাম দেয়া ও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। (যাদুল-মায়াদ)।
(৬) তাকবীর বলা : তাকবীর বলতে বলতে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নাত। কুরআনে এসেছে, তোমরা (রমযানের) রোজা পূর্ণ করো এবং আল্লাহর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা কর। [সূরা আল-বাকারা: ১৮৫]
ইবনে উমার (রা.) হতে বর্ণিত রাসূল (সা.) ঘর থেকে বের হয়ে ঈদগাহে পৌঁছার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তাকবীর বলতেন। ইবনে উমার (রা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে ঈদগাহে আসা পর্যন্ত উচ্চস্বরে তাকবীর পাঠ করতেন।
তাকবীর বলতে হবে এভাবে : ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ই-লাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।’
(৭) ঈদের নামাজের পূর্বে ও পরে নামায
ঈদের দিন ঈদের নামাযের পূর্বে কোন সালাত আদায় করা ঠিক নয়। রাসূল (সা.) ও তাঁর সাহাবীগণ ঈদগাহে যাওয়ার পর নামাযের আগে বা পরে কোন নামায আদায় করতেন না। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, রাসূল (সা.) ঈদের দিন বের হয়ে শুধুমাত্র ঈদের দু’রাকাত সালাত আদায় করতেন। ঈদের সালাতের পূর্বে বা পরে নফল বা অতিরিক্ত কোন নামায আদায় করতেন না। (বুখারী ও মুসলিম)।
মহানবী (সা.) খুৎবাহর আগে ঈদের সালাত আদায় করতেন। (সহি বুখারী ও সহি মুসলিম)
(৮) ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় : ঈদের দিনে পারস্পরিক ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করা ঈদের আরেকটি সুন্নাত। শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন বিনিময়ের মাধ্যমে সকলের মাঝে সুসম্পর্ক ও ভালোবাসা গড়ে উঠে। বিভিন্ন বাক্য দ্বারা এ শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। যেমন-ক) রাসূলে করীম (সা.)-এর সাহাবায়ে কিরাম ঈদের দিন যখন পরস্পর মিলিত হতেন তখন একে অপরকে বলতেন, ‘তাকাব্বাল্লাহু মিন্না ওয়ামিনকা’ অর্থ আল্লাহতায়ালা আমাদের ও আপনার ভাল কাজগুলো কবুল করুন। (ফতহুল বারী)।
খ) ‘ঈদ মুবারক’ বলে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। তবে প্রথমে উল্লেখিত বাক্য দ্বারা শুভেচ্ছা বিনিময় করা উত্তম। কারণ সাহাবীগণ এ বাক্য ব্যবহার করতেন ও এতে পরস্পরের জন্য কল্যাণ কামনা ও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া রয়েছে।
৯. ঈদের সালাত আদায়, খুতবা শ্রবণ ও দু’আ করা
জামাতের সাথে ঈদের সালাত আদায় করতে হবে। ঈদের সালাতের পর ইমাম সাহেব খুতবাহ প্রদান করবেন। এবং মুসল্লিগণ তা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করবেন। এটি পালন করা ওয়াজিব, ঈদুল ফিতর হলো মুসলিম উম্মাহর মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার মাধ্যমে তাকওয়া অনুশীলনের সমাপনী উৎসব, খুতবাহ অর্থ ভাষণ, বক্তৃতা। খুতবাহতে মুসলিম উম্মাহর দিকনির্দেশনামূলক বাণী ও সকলের কল্যাণের জন্য দু’আ থাকা বাঞ্ছনীয়। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে যে তাকওয়ার গুণ ও বহুবিধ মনুষ্যত্বের গুণাবলি অর্জিত হয়েছে, তা বাকী এগারো মাসে স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে প্রতিফলন ঘটানো উচিত।
১০. ঈদের মাঠে নারী, পুরুষ ও শিশুদের গমন : রাসূলের (সা.) যুগে নারী, পুরুষ, বালক-বালিকা, শিশু, মুকিম, মুসাফির সকলকে ঈদগাহে গমন করার জন্য গুরুত্ব সহকারে উৎসাহিত করা হয়েছে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, রাসূল (সা.) তার স্ত্রী ও মেয়েদেরকে উভয় ঈদে ঈদগাহের দিকে পাঠাতেন। যাতে মুসলমানদের শানশত্তকত এবং সংখ্যাধিক্য প্রকাশ পেতে পারে। উম্মে আতিয়াহ (রা.) থেকে সহীহ হাদিসে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) আমাদের নারীদের ঈদগাহে উপস্থিত হতে নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি ঋতুবতী নারী ও প্রসূতিদেরকেও ঈদগাহে গিয়ে মুসলমানদের দোয়ায় শামিল হতে বলেছেন।
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, রাসূল (সা.) এর সাথে ঈদুল ফিতর বা ঈদুল আযহার দিন বের হলাম। তারপর তিনি নামাজ পড়ালেন ও খুতবা দিলেন। তারপর মহিলাদের কাছে এলেন, তাদেরকে সদুপদেশ দিলেন, আখেরাত স্মরণ করালেন এবং সদকা বা দান করার আদেশ দিলেন। (বুখারী)।
১১। যাদের জন্য ঈদের নামায পড়া বৈধ : পুরুষ, মহিলা, শিশু, মুকীম, মুসাফির সকলেরই ঈদের নামায পড়া বৈধ। মসজিদে বা ঈদগাহে যেখানেই পড়–ক। জামায়াতের সাথে ঈদের নামায ছুটে গেছে এমন ব্যক্তি দু’রাকাত নামায পড়ে নেবে। ইমাম বুখারী (রহ.) বলেছেন : ঈদের নামায ছুটে গেলে দু’রাকাত পড়ে নেবে। অনুরূপভাবে তা নারীদের জন্যও প্রযোজ্য।
ঈদের দিনে খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদন : ঈদের দিন বৈধ খেলা-ধুলা ও নির্দোষ চিত্ত-বিনোদনকে উৎসাহিত করা হয়েছে। আয়েশা (রা.) বলেছেন, ঈদের দিন হাবশীরা রাসূল (সা.) এর নিকট খেলাধুলা করতো। আমি তার ঘাড়ের উপর দিয়ে উঁকি দিয়ে তা দেখার চেষ্টা করছিলাম, তিনি তার ঘাড় নীচু করলেন। ফলে আমি তাঁর ঘাড়ের উপর দিয়ে দেখলাম এবং তৃপ্ত হয়ে ফিরে গেলাম। (আহম্মদ, বুখারী, মুসলিম)।
হাদিসে বর্ণিত আছে, একবার নবী করিম (সা.) নিজের ঘরে প্রবেশ করে দেখতে পেলেন হযরত আয়েশা (রা.) এর পাশে বসে প্রতিবেশীদের দু’টি বালিকা গান করছে। সে গান কোন অশ্লীল ছিল না। বরং বুআস, যুদ্ধের কাহিনী সম্বলিত ছিল। রাসূল (সা.) তাদের এই বিনোদনের কোন গুরুত্ব দেননি। বরং ঘরের এক কোণে গিয়ে চাদর মুড়ি দিয়ে নীরবে শুয়ে থাকলেন। কিছুক্ষণ পর হযরত আবু বকর (রা.) প্রবেশ করে এ গানের আসর দেখে রেগে যান এবং ধমক দিয়ে বললেন, কি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ঘরে এই শয়তানী অনুষ্ঠান। তার কণ্ঠস্বর  শুনে নবী করিম (সা.) নিজের মুখ ম-লের কাপড় সরালেন এবং বললেন, ‘এদের ছেড়ে দাও। প্রত্যেক জাতির একটা খুশির দিন রয়েছে। আর আজ আমাদের খুশির দিন। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর এ কথায় হযরত আবুবকর (রা.) চুপ হয়ে গেলেন। কিন্তু গানের আসর আর অব্যাহত থাকল না। তিনি পীঠ ফিরাতেই হযরত আয়েশা (রা.) মেয়ে দু’টিকে চোখের ইশারা করল এবং তারা নিজেদের ঘরে চলে গেল।
নবীর যুগে ঈদ উৎসব ছিল অত্যন্ত পূত পবিত্র, মার্জিত ও নোংরামি বর্জিত। কিন্তু পরবর্তীতে হালকা আমোদ-প্রমোদের ছত্রছায়ায় ঈদের অনুষ্ঠান বিকৃত ও অনেক ক্ষেত্রে অশ্লীল হয়ে পড়েছে।
১৩. ঈদের দিনে আরো কিছু করণীয় :
ক) নিজ পরিবার-পরিজনের সাথে সময় অতিবাহিত করা এবং উত্তম উপদেশ দেয়া। যা পারিবারিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে।
খ) আত্মীয়-স্বজন, মাতা-পিতার সাথে দেখা করা ও খোঁজ-খবর নেয়া।
গ) পাড়া প্রতিবেশী, গরীব-অসহায় নির্বিশেষে সকলের সাথে মিশা, তাদের খোঁজ খবর নেয়া ও কুশল বিনিময় করা।
ঘ) সম্ভব হলে পরস্পরকে দাওয়াত দেয়া এবং আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা।
ঙ) ঝগড়া, বিবাদ, কলহ, হিংসা, বিদ্বেষ ভুলে সবার সাথে মোলাকাত আলিঙ্গন ও একাকার হয়ে যাওয়া।
চ) জীবন মানে সময়ের যোগফল। অর্থহীন কাজে সময় ব্যয় করা ও টিভির অনুষ্ঠান দেখার নামে মূল্যবান জীবন শেষ করা থেকে বিরত থাকা ও বিরত রাখা। বিশেষ করে নিজেকে ও নিজের পরিবার পরিজনকে।
ঈদে বর্জনীয় আমল : বর্তমানে মুসলিম মিল্লাতের অনেক পদস্খলন হয়েছে, চারিত্রিক অনেক অবক্ষয় ঘটেছে। ঈদের দিনে অনেক বর্জনীয় কাজ করা হচ্ছে। বর্জনীয় আমলগুলো নিচে তুলে ধরা হলো।
১। বিজাতীয় আচরণ প্রদর্শন : বর্তমান কালে বিজাতীয় আদর্শ অনুসরণে বিজাতীয় আচরণ মুসলিম সমাজে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। নিজস্ব সংস্কৃতি, আদর্শ উপেক্ষা করে পোশাক পরিচ্ছদে, চালচলনে, শুভেচ্ছা বিনিময়ে অমুসলিমদের অন্ধ অনুকরণে লিপ্ত হয়ে পড়েছে মুসলমানদের অনেকেই। মহানবী (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাথে সাদৃশ্য রাখবে সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে।” (সহিহ আবু দাউদ)।
২। জুয়া, মদ, জেনা ব্যভিচার ও মাদকদ্রব্য সেবন : আজকাল ঈদের দিনে আনন্দ ফুর্তির নামে কবিরাহ গুণাহর কাজ হতে দেখা যায়। অশ্লীল গান-বাজনার জমজমাট আসর বসে। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে এমন একটি দল পাওয়া যাবে যারা ব্যভিচার, রেশমি পোশাক, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল  (বৈধ) মনে করবে।” (সহীহ বুখারী)।
এদিনে জুয়ার আসর, মদ ও মাদকদ্রব্যের ছড়াছড়ি, ব্যাপকভাবে চলে। এগুলো সমাজকে কলুষিত ও ধ্বংস করছে।
৩। নারী-পুরুষ একে অপরের বেশ ধারণ : পোশাক-পরিচ্ছদ, চাল-চলন ও সাজ সজ্জার ক্ষেত্রে পুরুষ নারীর বেশ ধারণ ও নারী পুরুষের বেশ ধারণ হারাম। ঈদের দিনে এ কাজটি অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। রাসূল (সা.) পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী ও নারীর বেশ ধারণকারী পুরুষকে অভিশপ্ত করেছেন। (আবু দাউদ)।
৪। নারীদের অশালীন পোশাকে রাস্তায় বের হওয়া : খোলামেলা, অশালীন পোশাকে, নগ্ন, ও অর্ধনগ্ন পোশাকে রাস্তা ঘাটে বের হওয়া ইসলামী শরিয়তে নিষিদ্ধ। রাসূল (সা.) বলেছেন, একদল এমন নারী যারা পোশাক পরিধান করেও উলঙ্গ মানুষের মত হবে, অন্যদের আকর্ষণ করবে ও অন্যরা তাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথার চুলের অবস্থা উটের হেলে পড়া কুঁজের ন্যায়। ওরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি তার সুগন্ধিও পাবে না, যদিও তার সুগন্ধি বহুদূর থেকে পাওয়া যায়। (সহীহ মুসলিম)।
৫। নারীদের সাথে অবাধে দেখা-সাক্ষাৎ : প্রয়োজনে ও পর্দার আড়ালে নারীদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করা যাবে। কিন্তু গাইর মহররমা তথা শরিয়ত অনুমোদিত নয় এমন নিকট আত্মীয় নারীদের সাথে অবাধে দেখা সাক্ষাৎ করা যাবে না।
আমরা যদি ঈদকে ইবাদত হিসাবে পালন করতে চাই তবে অবশ্যই আমাদেরকে উল্লেখিত বিষয়সমূহ মেনে চলতে হবে।

My FacebookPage

Friday, May 31, 2019

লাইলাতুল কদরের ফজিলত,কিছু প্রশ্ন উত্তর ও অভিমত।

লাইলাতুল কদরের ফজিলত,কিছু প্রশ্ন ও উত্তর।


যে কারণে হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রজনী ‘লাইলাতুল কদর’

লাইলাতুল কদর মহিমান্বিত একটি রজনী। লাইলাতুল কদরের অন্য নাম শবে কদর। কদরের রাতে অজস্র ধারায় আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। এ রাতে এত অধিকসংখ্যক রহমতের ফেরেশতা পৃথিবীতে অবতরণ করেন যে, সকাল না হওয়া পর্যন্ত এক অনন্য শান্তি বিরাজ করে পৃথিবীতে।

মহান আল্লাহর ভাষায়-লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও তাৎপর্য অপরিসীম। কোরআনুল কারীমে এরশাদ হয়েছে, ‘আমি একে নাযিল করেছি শবে কদরে। শবে কদর সম্পর্কে আপনি কি জানেন? শবে কদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। (সূরা আল কাদর : ১-৫)।


কদর নামকরণের কারণ :যেহেতু এ রজনী অত্যন্ত মহিমান্বিত ও সম্মানিত তাই এ রজনীকে লাইলাতুল কদর বলা হয়ে থাকে। আবার এ রাত্রে যেহেতু পরবর্তী এক বৎসরের অবধারিত বিধিলিপি ফেরেশতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয় সে কারণেও এ রজনীকে কদরের রজনী বলা হয়।

সূরা কদর অবতীর্ণ হওয়ার পটভূমি : ইবনে আবি হাতেম (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের সম্মুখে বনী ইসরাঈলের জনৈক চারজন লোক সম্পর্কে আলোচনা করলেন যে, তারা দীর্ঘ হায়াত লাভ করে অধিককাল যাবত ইবাদত করেছেন। এ সময়ের মধ্যে তারা একটিও নাফরমানি করেননি। রাসুলুল্লাহর (সা.) যবান মোবারক থেকে এ কথা শুনতে পেরে সাহাবায়ে কেরাম অত্যন্ত বিস্মিত হলেন এবং নিজেদের ব্যাপারে আফসোস করতে লাগলেন।

সাহাবায়ে কেরামের এ আফসোসের পরিপ্রেক্ষিতে মহান রাব্বুল আলামিন হজরত জিবরাঈলের (আ.) মাধ্যমে রাসুলের (সা.) নিকট এমন সময় এই সুরায়ে ‘কদর’ অবতীর্ণ করেন। (তাফসিরে মাআরিফুল কুরআন ও তাফসিরে মাজহারি)।

লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব : কদরের ফজিলত বোঝানোর জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ‘কদর’ নামে আলাদা একটি সূরা অবতীর্ণ করেন। কেবল কোরআন নয় বরং হাদিসেও কদরের ফজিলত রয়েছে বলে প্রমাণ রয়েছে।

কদরের ফজিলত সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সূরায়ে কদরে এরশাদ করেন-নিশ্চয়ই আমি পবিত্র কোরআনুল কারীমকে লাইলাতুল কদরে অবতীর্ণ করেছি। আপনি কি জানেন লাইলাতুল কদর কি? লাইলাতুল কদর হলো হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। উক্ত রজনীতে ফেরেশতাগণ ও জিবরাঈল (আ.) তাদের প্রতিপালকের নির্দেশে প্রত্যেক বিষয় নিয়ে অবতীর্ণ হন এটা শান্তিময় রজনী যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। (সূরা আল কদর : ১-৫)।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন, নিশ্চয় আমি তা (কোরআন) এক মোবারক রজনীতে অবতীর্ণ করেছি, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়। (সূরা আদ দুখান : ১-৪)।

হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, শবে কদরে হজরত জিবরাইল (আ.) ফেরেশতাদের বিরাট এক দল নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং যত নারী-পুরুষ নামাজরত অথবা জিকিরে মশগুল থাকে, তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন। (তাফসিরে মাজহারি)।

মিশকাত শরিফে উল্লেখ রয়েছে, হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, ‘যদি তোমরা কবরকে আলোকময় পেতে চাও তাহলে লাইলাতুল কদরে জাগ্রত থেকে ইবাদত কর। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, যদি কেউ ঈমানের সঙ্গে সাওয়াব লাভের খাঁটি নিয়তে লাইলাতুল কদর কিয়ামুল্লাইল বা তাহাজ্জুদে অতিবাহিত করে তবে তার পূর্ববর্তী সকল গোনাহ ক্ষমা করা হবে। (বুখারি, হাদিস নং : ৬৭২)।

প্রশ্নঃ ১ লাইলাতুল কদর কবে?

উত্তরঃ

লাইলাতুল কদরের নির্দিষ্ট কোনও তারিখ নেই। অনেকেই মনে করেন ২৭ রমজানই লাইলাতুল কদরের রাত। আসলে এ ধারণাটি সঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) কখনও বলেন নি যে, ২৭ রমজানের রাত কদরের রাত। তবে ২১ রমজান থেকে নিয়ে ২৯ রমজন পর্যন্ত বেজোড় যে কোন রাতই শবে কদর হতে পারে। লাইলাতুল কদরের তারিখের ব্যাপারে নবী করীম (সা.) এরশাদ করেন, আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছে, অতঃপর আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। অতএব তোমরা শেষ দশ রাতের বেজোড় রাতসমুহে তা খোঁজ করবে। (বুখারি, হাদিস নং :৭০৯)।

রাসূল (সা.) আরও বলেন, ‘রমজানের শেষ দশদিনে তোমরা কদরের রাত তালাশ কর। (মুসলিম, হাদিস নং: ১১৬৯)।

একদা হজরত উবায়দা (রা.) নবী করীম (সা.) কে লাইলাতুল কদরের রাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তখন নবীজী সেই সাহাবিকে বললেন রমজানের বেজোড় শেষের দশ দিনের রাতগুলোকে তালাশ করো। (বুখারি, হাদিস নং: ২০১৭)।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যদি কেউ লাইলাতুল কদর খুঁজতে চায় তবে সে যেন তা রমজনের শেষ দশ রাত্রিতে খোঁজ করে। (মুসলিম, হাদিস নং : ৮২৩)। তাই ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ রমজানের রাতগুলোকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

ইবনে মাজাহ শরিফে উল্লেখ রয়েছে, হজরত রাসূল (সা.) বলেন, যে লোক শবে কদর থেকে বঞ্চিত হয় সে যেন সমগ্র কল্যাণ থেকে পরিপূর্ণ বঞ্চিত হল। আবু দাউদ শরিফে উল্লেখ রয়েছে, হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর পেলো কিন্তু ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে কাটাতে পারলো না, তার মতো হতভাগা দুনিয়াতে আর কেউ নেই। কদরের রাতের ইবাদতের সুযোগ যাতে হাতছাড়া হয়ে না যায় সেজন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামশেষ দশদিনের পুরো সময়টাতে ইতেকাফরত থাকতেন। (মুসলিম, হাদিস নং : ১১৬৭)।

প্রশ্নঃ ২ শবে কদরে কী করব?

উত্তরঃ

রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে ‘লাইলাতুল কদর’ লাভ করার জন্য রমজানের শেষ দশরাত জাগ্রত থেকে ইবাদতে কাটিয়েছেন এবং উম্মতে মুহাম্মাদীকেও সারা রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাসূল (সা.) বলেন, শবে কদরকে নির্দিষ্ট না করার কারণ হচ্ছে যাতে বান্দা কেবল একটি রাত জাগরণ ও কিয়াম করেই যেন ক্ষান্ত না হয়ে যায় এবং সেই রাতের ফজিলতের উপর নির্ভর করে অন্য রাতের ইবাদত ত্যাগ করে না বসে। তাই বান্দার উচিত শেষ দশকের কোন রাতকেই কম গুরুত্ব না দেয়া এবং পুরোটাই ইবাদাতের মাধ্যমে শবে কদর অন্বেষণ করা।

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আমি রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম হে আল্লাহর রাসূল আমি যদি কদরের রাত সম্পর্কে অবহিত হতে পারি তবে আমি কি করব? তখন রাসূল (সা.) আমাকে এই দুয়া পাঠ করার জন্য বললেন। ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি’। (তিরমিজি, হাদিস নং : ৩৫১)।

লাইলাতুল কদরের ফজিলত অপরিসীম। তাই সারা রাত জাগরণ করে সঠিকভাবে ইবাদত-বন্দেগীতে মনোনিবেশ করা কর্তব্য। বেশি বেশি নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ, সালাতুস তাসবিহ, উমরী কাজা নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দান-সাদকা, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, তাওবা-ইসতেগফার, দুয়া-দুরূদসহ ইত্যাদি নফল আমলের প্রতি মনযোগী হওয়া একান্ত জরুরি।

প্রশ্নঃ ৩ অন্য কোন রাত্রিতে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় না করে শুধু লাইলাতুল কদরের রাত্রিতে তাহাজ্জুদ নামায আদায় করার বিধান কি?

উত্তরঃ

লাইলাতুল কদর বা ভাগ্য রজনীতে ইবাদত করার মহান ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। আমাদের মহান প্রতিপালক উল্লেখ করেছেন যে, এই রজনী হাজার মাসের চেয়ে উত্তম এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উল্লেখ করেছেনযে ব্যক্তি ঈমান সহকারে ও প্রতিদানের আশায় লাইলাতুল কদরে নামায পড়বে তার অতীতের সমস্ত গুনাহমাফ করে দেয়া হবে।

আল্লাহতাআলা বলেছেন:

১. নিশ্চয়ই আমি এটি নাযিল করেছিলাইলাতুল কদরে। ২. তোমাকেকিসে জানাবে লাইলাতুল ক্দর কি? ৩. লাইলাতুল ক্দর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। ৪. সেরাতে ফেরেশতারাও রূহ (জিবরাইল) তাঁদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়েঅবতরণ করেন। ৫. শান্তিময় সেই রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত।” [সূরা আল কদর, ৯৭: ১-৫]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি ঈমান সহকারে এবং প্রতিদানের আশায় লাইলাতুল ক্দরেনামায পড়বে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।”[সহীহ বুখারী (১৯০১) ও মুসলিম (৭৬০)]হাদিসে“ঈমান সহকারে”কথাটির অর্থ হচ্ছে- এই রাতের মর্যাদা ও বিশেষ আমল শরিয়তসম্মত হওয়ার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। আর “প্রতিদানের আশায়” কথাটির অর্থ হচ্ছে- নিয়্যতকে আল্লাহ তাআলার জন্য একনিষ্ঠ করা।

দুই :

কোন রাতটি লাইলাতুল ক্দর তা নিয়ে আলেমদের মাঝে বিভিন্ন অভিমত রয়েছে।
‘ফাত্হুল বারী’ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে এ সংক্রান্ত অভিমত ৪০ টির উপরে পৌঁছেছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে সঠিক মত হল লাইলাতুল কদর রমজান মাসের শেষ দশকের কোন এক বেজোড় রাত।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হয়েছে যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লামবলেছেন: “রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতেলাইলাতুল ক্দর অনুসন্ধান কর।”[সহীহ বুখারী (২০১৭) ও সহীহমুসলিম (১১৬৯), তবে শব্দচয়ন ইমাম বুখারী]

ইমাম বুখারী এই হাদিসটির শিরোনাম লিখেছেন“রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাত লাইলাতুল ক্দর অনুসন্ধান”। এই রাতটি গোপন রাখার পেছনে রহস্য হল মুসলমানদেরকে রমজানের শেষ দশকের সবগুলো রাতে ‘ইবাদত-বন্দেগী, দোয়াও যিকিরের উপর সক্রিয় রাখা। একই রহস্যের কারণে জুমার দিনেরযে সময়টিতে দোয়াকবুল হয় তা সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি এবং একই কারণে আল্লাহর ঐ ৯৯ টি নাম সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি যে নামগুলোর ব্যাপারেনবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহিওয়া সাল্লামবলেছেন:“যে ব্যক্তিনামগুলো গণনা করবে [অর্থাৎমুখস্ত করবে, এর অর্থ বুঝবে এবং সে অনুযায়ী আমল করবে] সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”[সহীহ বুখারী (২৭৩৬) ও সহীহ মুসলিম (২৬৭৭)]

আলেমগণ বলেন,
এই রাতটির নির্দিষ্ট তারিখ গোপন রাখার পিছনে হিকমত হল মানুষ যেন এ রাতের মর্যাদা লাভের জন্য চেষ্টা সাধনা করে। নির্দিষ্ট তারিখ জানা থাকলে মানুষ শুধু নির্দিষ্টভাবে সেই রাতে ইবাদত-বন্দেগীকরত।একই ধরনের ব্যাখ্যা জুমার দিনের (দোয়াকবুলের) সুনির্দিষ্ট সময় গোপন রাখার ব্যাপারে ইতিপূর্বেউল্লেখ করা হয়েছে।”[ফাত্হুল বারী (৪/২৬৬)]

তিন: পূর্বোক্তআলোচনার ভিত্তিতে বলা যায় যে, কারো পক্ষে নির্দিষ্ট কোনরাতের ব্যাপারে এ নিশ্চয়তা দেয়া সম্ভব নয় যে, এটিই‘লাইলাতুল ক্দর’। বিশেষতঃ যখন আমরা জানি যে,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএটি কোন রাত তা সুনির্দিষ্টভাবে উম্মতকে জানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরে তিনি জানিয়েছেন যে, আল্লাহ তাআলা এর জ্ঞান উঠিয়ে নিয়েছেন। উবাদা ইবনেসামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম ‘লাইলাতুল ক্দর’ এর ব্যাপারে খবর দিতে বের হলেন।এ সময় দু’জন মুসলমানঝগড়া করছিলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন :

“আমি আপনাদেরকে ‘লাইলাতুল ক্দর’ এর ব্যাপারে অবহিত করতে বের হয়েছিলাম। কিন্তু অমুক অমুক ব্যক্তি বিবাদে লিপ্ত হওয়ায়তা (সেই জ্ঞান) উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। আশা করি উঠিয়ে নেয়াটা আপনাদের জন্য বেশি ভাল হয়েছে। আপনারা সপ্তম (২৭ তম), নবম (২৯ তম) এবং পঞ্চম (২৫ তম) তারিখে এর সন্ধান করুন।”[সহীহ বুখারী (৪৯)]

ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটিরআলেমগণ বলেন:

“রমজান মাসে নির্দিষ্ট কোন রাতকে লাইলাতুল ক্দর হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য সুস্পষ্ট দলীলের প্রয়োজন। তবে অন্যান্য রাতের চেয়ে শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর কোন একটিতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর এর মধ্যে ২৭তম রাতে হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন হাদিস থেকে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায়।এ বিষয়টি আমরা ইতিপূর্বেও উল্লেখ করেছি।”

[ফাতাওয়াল্‌ লাজনাহ আদ্‌দায়িমা (ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্র) (১০/৪১৩)]

তাই একজন মুসলিমের নির্দিষ্ট কোন রাতকে লাইলাতুল ক্দর হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত নয়। কারণ এতে করে এমন বিষয়ে নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়, আসলে যে বিষয়ে নিশ্চয়তা প্রদান করা সম্ভবপর নয়। এবং এতে করেব্যক্তি নিজেকেপ্রভুত কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করার সম্ভাবনা তৈরী হয়। হতে পারে লাইলাতুল কদর ২১তম রাতে অথবা ২৩তম রাতে অথবা ২৯তম রাতে। তাই কেউ যদি শুধু ২৭তম রাতে নামায আদায় করে এতে করেতিনি অফুরন্ত কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবেন এবংএই মুবারকময় রাতের ফজিলত হারাবেন। সুতরাং একজন মুসলিমের উচিত গোটা রমজান জুড়ে আনুগত্য ও ‘ইবাদতের কাজে সর্বোচ্চ সাধনা চালানো। আর শেষ দশকে আরো বেশি তৎপর হওয়া। এটিই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর আদর্শ।আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত যে তিনি বলেন :“(রমজানের শেষ) দশ রাত্রি শুরু হলে নবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোমর বেঁধে নামতেন। তিনি নিজে রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং তাঁর পরিবারবর্গকে (ইবাদাতের জন্য)জাগিয়ে দিতেন।” [সহীহ বুখারী (২০২৪) ও সহীহ মুসলিম (১১৭৪)] আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।

Thursday, May 30, 2019


খতম তারাবীর ইমামতি করে বিনিময় বা হাদিয়া নেওয়া জায়েয় কি না? এক মাসের জন্য নিয়োগ দিয়ে বেতন দিলে জায়েয হবে কি না? কেউ কেউ বলেন, ফরয নামাযের ইমামতির বিনিময় গ্রহণ যখন জায়েয তাই খতম তারাবীর বিনিময় গ্রহণও জায়েয হবে। এছাড়া হাফেয সাহেবকে যদি দু এক ওয়াক্ত ফরয নামাযের দায়িত্ব দেওয়া হয় তবে তো নাজায়েয হওয়ার প্রশ্নই থাকে না। তাদের একথা ঠিক কি না? ইমামতির হীলা হোক বা অন্য কোনো উপায়ে তারাবীর বিনিময় বৈধ হবে কি না? দলিল-প্রমাণসহ বিস্তারিত জানতে চাই।


উত্তর


খতম তারাবীর বিনিময় দেওয়া-নেওয়া দুটোই  নাজায়েয। হাদিয়ার নামে দিলেও তা জায়েয হবে না। এক মাসের জন্য নিয়োগ দিয়ে বেতন হিসেবে দিলেও জায়েয নয়। কারণ এক্ষেত্রেও প্রদেয় বেতন তারাবীহ এবং খতমের বিনিময় হওয়া স্বীকৃত। মোটকথা, খতম তারাবীর বিনিময় গ্রহণের জন্য কোনো হীলা অবলম্বন করলেও তা জায়েয হবে না। কারণ খতম তারাবী খালেস একটি ইবাদত, যা নামায-রোযার মতো ইবাদতে মাকসূদার অন্তর্ভুক্ত। আর এ ধরনের ইবাদতের বিনিময় বা বেতন দেওয়া-নেওয়া উম্মতে মুসলিমার ঐক্যমতের ভিত্তিতে নাজায়েয। এতে না কোনো মাযহাবের মতপার্থক্য আছে, না পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ফকীহগণের মাঝে কোনো মতভেদ আছে। 
ইমামতির বেতন ঠিক করা এবং তা আদায় করা যদিও পরবর্তী ফকীহগণের দৃষ্টিতে জায়েয। কিন্তু খতম তারাবীর বিনিময়টা ইমামতির জন্য হয় না। বরং তা মূলত কুরআন খতমের বিনিময়ে হয়ে থাকে। আর তেলাওয়াতের বিনিময় গ্রহণ করা সকল ফকীহের নিকট হারাম। অধিকন্তু পরবর্তী ফকীহগণ যে ইমামতির বেতন জায়েয বলেছেন সেটা হল ফরয নামাযের ইমামতি। সুন্নত নামাযের ইমামতি এর অন্তর্ভুক্ত নয়। 
আর হাফেযদের দেওয়া বিনিময়কে জায়েয করার জন্য এই হীলা অবলম্বন করা যে, শুধু রমযান মাসের জন্য তার উপর দু এক ওয়াক্ত নামাযের ইমামতির দায়িত্ব দেওয়া হবে-এটা একটা বাহানামাত্র। যা পরিহার করা জরুরি। কারণ এই হীলার অর্থ হল যে, এ বিনিময়টা তাকে ফরয নামাযের ইমামতির জন্য দেওয়া হচ্ছে। আর খতম তারাবী সে বিনিময়হীনভাবেই করে দিচ্ছে। কিন্তু নিজের মনকে একটু প্রশ্ন করে দেখুন, যদি ওই হাফেয সাহেব তার দায়িত্বে অর্পিত ফরয নামাযের ইমামতি যথাযথ গুরুত্বের সাথেই আদায় করেন, কিন্তু খতম তারাবীর ইমামতি না করেন তবে কি তাকে ওই বিনিময় দেওয়া হত? এ কথা সুস্পষ্ট যে, কখনো তা দেওয়া হত না। বোঝা গেল, বিনিময়টা মূলত খতম তারাবীর, ফরযের ইমামতির নয়।
এজন্যই আকাবিরদের অনেকে এই হীলা প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর দলিলের ভিত্তিতেও তাঁদের ফতওয়াই সহীহ। দেখুন : ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩২২; ইমদাদুল আহকাম ১/৬৬৪
এ বিষয়ে কিছু হাদীস আছারের অনুবাদ ও ফিকহের কিতাবের উদ্ধৃতি পেশ করা হল।
১. আবদুর রহমান ইবনে শিবল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমরা কুরআন পড়। তবে তাতে বাড়াবাড়ি করো না। এর প্রতি বিরূপ হয়ো না। কুরআনের বিনিময় ভক্ষণ করো না এবং এর দ্বারা সম্পদ কামনা করো না।-মুসনাদে আহমদ ৩/৪২৮, হাদীস : ১৫৫২৯; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৫/২৪০
২. ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তোমরা কুরআন পড় এবং আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা কর। তোমাদের পরে এমন জাতি আসবে, যারা কুরআন পড়ে মানুষের কাছে প্রার্থনা করবে।-মুসনাদে আহমদ ৪/৪৩৭, হাদীস : ১৯৯১৭
৩. আবদুল্লাহ ইবনে মাকিল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি এক রমযানে লোকদের নিয়ে তারাবীহ পড়লেন। এরপর ঈদের দিন উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ রাহ. তার কাছে এক জোড়া কাপড় এবং পাঁচশ দিরহাম পাঠালেন। তখন তিনি কাপড় জোড়া এবং দিরহামগুলো এই বলে ফেরত দিলেন যে, আমরা কুরআনের বিনিময় গ্রহণ করি না।

-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৫/২৩৭, হাদীস : ৭৮২১ আরো দেখুন : ফাতাওয়া শামী ৬/৫৭; তানকীহুল ফাতাওয়াল হামীদিয়া ২/১৩৭-১৩৮; আলইখতিয়ার লিতালীল মুখতার ২/৬২; শিফাউল আলীল ওয়া বাল্লুল গালীল (মাজমুআ রাসায়েল ইবনে আবেদীন) ১/১৫৪-১৫৫; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৩১৫-৩১৯; রাফেউল ইশকালাত আনহুমাতিল ইস্তিজার আলাত্তাআত, মুফতীয়ে আযম হযরত মাওলানা মুফতী ফয়যুল্লাহ রাহ.

My FacebookPage